Wednesday, October 22, 2014

ফিরে এসো

দু'বছর আগে, ঠিক এই সময়ে, তোমার বিদায় নেওয়ার মুহূর্ত আসন্ন। আমরা তৈরী ছিলাম না, আজও নই। আমার জন্য কি রয়ে গেল? ওই, "একখানা নদী, দু'তিনটে দেশ, কয়েকটি নারী....।" সব দেশে, প্রত্যেক শহরে, আজীবন কান পেতে শুনব, " যদি নির্বাসন দাও....।" আমার সেই সময় গুলি তোমার কাছে বন্ধক রাখা নীললোহিত। রানী ও নীরা, দু'জনেরই খুব অসুখ; অবিনাশ কবিতাশূন্য; ঠিক, শুধু কবিতারই জন্য অমরত্ব তাচ্ছিল্য কর, ফিরে  এসো।

Monday, October 13, 2014

5:59

শেষ সাত দিন যাবত্ দুজনের মধ্যে কিছু একটা চলছে, ঠিক করে কথা বলছি না। তার মধ্যে, গত শুক্রবার জন্মদিন ছিল, আমি ভুলে গেছি, সহকর্মীরা পালন করার সময়, বিকেলে যখন আমাকে কনফারেন্স রুমে আসতে বলল, মনে পড়ল তখন, এসে একবার শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শুভ জন্মদিন জানালাম। মুখে আমাদের দুজনের হাসি ছিল না।

ঠিক ছ'টার সময় বেরোবার আগে, আমি ওকে bye জানিয়ে বের হই বা দুজন একসাথে ফিরি । শুক্রবার, বেরোনোর সময়, ওকে চেম্বারে দেখতে পাইনি । এরকম হয় না, কোনো কাজ থাকলে, জানিয়ে দেয় আগে থেকে। তাছাড়া, শনি-রবি দুজনের প্রচুর শপিং করতে হত, আমার বিশেষ করে, তার জন্য কথা বলতে হত। আমি কিছু না জানিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। বাড়িতে এসে, ওর জন্মদিন উপলক্ষে একটা দামি ওয়াইনের বোতল খুলে তার ছবি পাঠালাম একটা mobile app এ । বললাম, " for you, on the occasion of your birthday." শনিবার সকালেও কোনো উত্তর না পাওয়ায় app খুলে দেখি, আমাকে ও list থেকে বের করে দিয়েছে । শনি-রবি, আমি চুপচাপ ছিলাম, ফোন ও করিনি।

আজ আপিসে গিয়েও আমি  সারাদিন চুপ করে ছিলাম। বিকেলে ফেরার আগে মনে হল, আজ কথা বলা দরকার। আজ বিকেল  5:59, করিডরের  এক প্রান্তে আমি, ওর চেম্বারের দিকে এগোতে যাব, আবছা আলোয় দেখলাম, করিডরের অপর প্রান্ত দিয়ে ও বেরিয়ে যাচ্ছে ।

Monday, October 6, 2014

শুভ বিজয়া

আমার নিকটতম অন্তরঙ্গ বন্ধু, শেষ কয়েক বছর ধরে রকি হিলে থাকে। আমরা স্কুলের হাফ প্যান্ট বন্ধু, গঙ্গার ধারে একসাথে বসে বিড়ি খাওয়া বন্ধু । সবে বিয়ে করেছে, ওর বৌ মার্কিন মুলুকে প্রথম পুজো কাটালো। ওদের রবিবারের রাত মানে আমার আজ  সোমবারের অফিস শুরু করার আগে ভিডিও কলে বিজয়া সারার কথা ছিল । আমি  কল করে পেলাম না। বন্ধুর বৌ জানালো যে ওরা জিমে, একটু পরে কল করছে । তা ভালো, দুজনেরই চেহারা একটু বেশিই ভালো । আমি দুজনকেই অভিনন্দন করব ভেবেছিলাম জিমে যাওয়া শুরু করেছে বলে।  ভিডিও কল শুরু হতেই দেখলাম, বন্ধু জিম সেরে কোক দিয়ে JD খাচ্ছে আর বৌ,  জুস দিয়ে Absolut খাচ্ছে । "শুভ বিজয়া " বলে শুরু করলাম।

Friday, September 26, 2014

কলরব

সেদিন সিওলে এলাম বেশ রাত করেই, দুপুরেই শুনেছি আগের রাতের যাদবপুরের ঘটনা, ছাত্রদের ওপর পুলিশের লাঠি, মনটা কেমন করছিল। গাড়িতে ভিডিওগুলো দেখছিলাম । সকালে টক আছে, একটু সেটা নিয়েও ভাবছি হাঁটতে হাঁটতে, গভীর রাতের  কফি খেয়ে ফিরছি, বেশ হাওয়া দিচ্ছে । সিগনাল খেয়াল করিনি। হঠাত্  সামনে দিয়ে চার পাঁচটা দমকল গাড়ি জোরে আওয়াজ করে চলে গেলো। আওয়াজটা খুব চেনা লাগলো। এটা "The Dreamers " ছবির শেষ scene টার আওয়াজের মতো। রাস্তায় বিপ্লব নেমে এসেছে, পুলিশের গাড়ির আওয়াজ, মানুষের প্রতিবাদের আওয়াজ, মানুষের   মিছিল  আর Theo, Isabelle-র হাত ধরে ভিড়ে মিশে গেলো। আমি যাদবপুরের আগের রাতটা উপলব্ধি করলাম । আমার এতো সিনেমা দেখার কিছু ছাপ থাকে অবচেতনে ।

Tuesday, September 23, 2014

চলতে থাকি

আমি  বাঙ্গালী । আমার জাত্যাভিমান আছে, গর্ব আছে। আমার গর্ব করার, অভিমান করার কারণ আছে, আমি ক্ষমতা রাখি, আমার অধিকার আছে । এই গর্ব দুটো রবি ঠাকুর পড়া, দুটো সত্যজিতের ছবি দেখা বা নেতাজীর নাম করে রক্ত গরম করা থেকে আসে না; কিমবা পাড়ার  রকে, আড্ডায় সারা দুনিয়ার বিপ্লব ঘটিয়ে, পর নিন্দা- পর চর্চা করেও আসে না; এই গর্ব উত্তরাধিকার সূত্রে না পাওয়াই কাম্য; অভিমান, যা সব কিছু একসময় " ছিল " , শুধু তাতেই আটকে আমরা একটা যুগ কাটিয়েছি, বাঙ্গালীর এই বুদ্ধিমত্তায় আটক থাকার জন্য তার একসময়ের সামাজিক  ও রাজনৈতিক পরিবেশ দায়ী, যুক্তি ছাড়া গা ভাসিয়ে দেওয়া দায়ী,  সবকিছু জানা কিন্তু ভুল জানা দায়ী ।

গর্ব আসুক, অভিমান আসুক, আসা দরকার, রাখা দরকার। তবে  অভিমান আসুক নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে, নিজের মানসিক  উত্কর্ষতার ভেতর দিয়ে, নিজেকে ভেঙ্গে গড়ার মধ্য দিয়ে।

যাদবপুরের ঘটনায় কলকাতার বুকে মানুষের অরাজনৈতিক প্রতিবাদ বোঝায় কেন  বাঙ্গালী হিসেবে আমি গর্বিত।  এরকমটাই হওয়া দরকার, আমরা তো বাঙ্গালী।

Wednesday, June 19, 2013

হেনা [প্রথম অংশ- হেনার কাছে যখন পৌঁছলাম]


ল্যাপটপের ব্যাগটা গুছাচ্ছি, আর দশ মিনিটে ট্যাক্সি এসে যাবে, ভারতীয় সময় রাত ১০ টা, একটা বিদেশী নাম্বার ভেসে উঠল ফোনে। বুঝলাম, যেখানে যাব, সেখানকার নাম্বার।

-      -হ্যালো

-   -হ্যালো, আমার নাম হেনা, আমি Silver Bird Guest House, কিতিলা থেকে বলছি, আপনার বুকিং আছে আগামীকাল রাতের, ফোন করলাম আপনার আগামীকালের বুকিং কনফার্ম করার জন্য। আপনি বুকিং . কম এ এই বুকিং করেছেন।

-     -হ্যাঁ, ধন্যবাদ, হ্যাঁ আমি আসছি। আর দয়া করে আগামীকাল রাতে কিতিলা এয়ার পোর্টে ক্যাবের ব্যবস্থা করে রাখবেন। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।

-        - নিশ্চয়ই, ক্যাব ২৫ ইউরো নেবে, আমি বলে রাখবো, WELCOME.

এর থেকে বেশী কথা বলার সময় ছিল না আমার। ট্যাক্সি এসে গেলো। ট্যাক্সিতে এয়ার পোর্টের দিকে যাওয়ার সময়, বারবার মনে হতে লাগল, আরে মেয়েটির গলার আওয়াজ তো বেশ মিষ্টি, কি যেন নাম বলল, হ্যাঁ হেনা। আরেকটু কথা বললে হত। ঠিক আছে, পরের দিন তো দেখা হচ্ছেই।

পরের দিন খুব ভোরে মিউনিখ নামলাম, সেখান থেকে  ফ্লাইট ধরে দুপুর বারোটাতে হেলসিঙ্কি। এখানে আমাকে অনেকক্ষণ প্রায় আট ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত। কিতিলা যাওয়ার ফ্লাইট রাত নটা। কিতিলার অবস্থান এবং তার এয়ার পোর্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের জন্য এই লিঙ্কটি দয়া করে দেখে নেবেন - http://en.wikipedia.org/wiki/Kittil%C3%A4_Airport

আমি কিতিলাতে কেবল এক রাত থাকব, হেনার বাড়িতে। পরের দিন সকালে লেভি নামের এক গ্রামে যাব, ফিনল্যান্ডের আরও উত্তরে। সেখানেই বাকি দিনগুলোর জন্য হোটেল বুকিং করা আছে।  

কি করব আট ঘণ্টা হেলসিঙ্কিতে? এয়ার পোর্টে এক গেলাস বিয়ার মেরে দিয়ে, ফিন এয়ারওয়েজের জিম্মায় ব্যাগেজ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হেলসিঙ্কির আকাশ মেঘলা, মার্চ মাস, দুপুরবেলা, -৫ ডিগ্রী, হালকা ঝিরিঝিরি বরফ পড়ছে। মিউনিখ থেকে এক প্যাকেট ক্যামেল সিগারেট কিনেছিলাম, ধরালাম, কালো চশমাটা পরে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা  এদিক ওদিক হেঁটে বেড়ালাম। ফুটপাথের এক দোকান থেকে একটা রেন ডিয়ারের মাংসের র‍্যাপ আর এক গেলাস বিয়ার দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারলাম। রেন ডিয়ার খাব বলে বেশ কয়দিন ধরেই আমি একটু উত্তেজিত! এরপর এয়ার পোর্টে ফিরে এলাম, বিকেল পাঁচটা বাজে প্রায়। চেক ইন সেরে এয়ার পোর্টে ঢুকে গেলাম। ঢুকে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে একটি ওক ব্যারেল বিয়ারের দোকান পেলাম। ব্যাস, আর আমাকে পায় কে? বিয়ার খেতে খেতেই চোখের সামনে সন্ধ্যে নেমে এলো এয়ার পোর্টের বাইরে। গেলাস হাতেই অপেক্ষা করতে লাগলাম রাতের ফ্লাইটের।



কিতিলাতে ফ্লাইট নামল রাত সাড়ে দশটা। ছোট্ট এয়ার পোর্ট, ফ্লাইট আসার দেড় ঘণ্টা আগে খোলে, নইলে বন্ধ থাকে। ফ্লাইট থেকে দেখলাম বাইরে বড় বড় করে লেখা আছে -৩০ ডিগ্রী, চারদিকে পুরু বরফ। ফ্লাইট থেকে নামতেই সারা শরীরে এসে লাগল ঠাণ্ডা হাওয়া। সব রকম গরম পোশাক পরা সত্ত্বেও কাঁপছি, পা অসাড় হয়ে আসছে। ফ্লাইট থেকে নেমে কোনও বাস নেই এয়ার পোর্টে এক্সিটের দিকে। বরফের ওপর দিয়ে ওরকম ঠাণ্ডায় রাত সাড়ে দশটায় হেঁটে এগিয়ে চললাম ব্যাগেজ নিতে। ছবি তোলার বৃথা চেষ্টা, হাত কাঁপছে পুরো, ছবি ঝাপসা এলো।




ব্যাগেজ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, আমার বয়সী একটি ছেলে মুখে সিগারেট নিয়ে আমার নামটি একটি ল্যাতপ্যাতে কাগজের ওপর লিখে দিব্যি ওই ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে আছে। লাইটার হেলসিঙ্কি এয়ার পোর্টে চেকিনে দিয়ে দিতে হয়েছিল। এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রথমেই ওকে বললাম, আগুন দে ভাই। একটা ক্যামেল নিজেও জ্বালালাম, ওকেও দিলাম। ও ওই সিগারেটটিও মেরে দিল। আমি পুরো সিগারেট খেতে পারলাম না বাইরে দাঁড়িয়ে, গা-হাত-পা কাঁপছে আর সেই মারাত্মক ঠাণ্ডা হাওয়া। গাড়িতে উঠে বসতে না বসতেই পৌঁছে গেলাম হেনার বাড়ি, এক কিলোমিটারও না, গাড়ির মিটার বলছে ২৯ ইউরো। আমি বললাম হেনা আমাকে ২৫ ইউরো বলেছিল তো! ছেলেটি শেষমেশ ২৫ ইউরো নিয়েই কেটে পড়ল।

অবশেষে আমি পৌঁছলাম Lapland এ, এই অঞ্চলকে Samiland ও বলা হয়। Arctic Circle এর মধ্যে পৌঁছে গেছি!

রাত প্রায় এগারোটা, চারদিকে বরফ, হালকা তুষারপাত, ঠাণ্ডা হাওয়া, ফাঁকা রাস্তা, নীল ঘন অন্ধকার, হেনার Guest House এর দরজার সামনে আমি একা দাঁড়িয়ে। কোনও ইলেকট্রিক বেল নেই, কিছু ছোটো ছোটো ঘণ্টা ঝোলানো। ঋতুদার The Last Lear শিখিয়েছে, কি করে এর ব্যবহার করতে হয়। বাজালাম ঘণ্টাগুলো, এক অদ্ভুত সুন্দর মুখশ্রী বেরিয়ে এলো দরজা খুলে। একটা সুন্দর হাসি ঠোঁটের কোনায়, বলল, “হাই, আমাদের পরিবারে স্বাগতম।” একটু হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে Guest House এর ভেতরে ঢুকে গেলাম।

Monday, June 17, 2013

ফাঁকা প্রেম



এই ঘটনাটি লিখতে গিয়ে “ফাঁকা প্রেম” নামটাই বেছে নিলাম। কারন যেদিন ভেবেছিলাম এই ছোট্ট কয়েক ঘণ্টার কথা লিখব, সেদিন ফ্লাইটে ছিলাম আর অনুপমের “ফাঁকা ফ্রেম” শুনছিলাম। আমি অনুপমের গানের খুব একটা ভক্ত নই, তবে এই ক্ষেত্রে এই নামটা আমার বেশ উপযুক্ত মনে হল, অনুপমের গানটার থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়ে। এটি কোনও সেন্টি খাওয়া প্রেমের গল্প নয়, আবেগ নিংড়ে লেখা নয়, শুধু ঘটনাটি লেখা। এতে কোনও ব্যক্তিবিশেষকে অপমান করার ইচ্ছে নেই, পাঠকদের থেকে “আহা আহা...আহারে...ইসস” শোনারও ইচ্ছে নেই।  এতে কারও ব্যক্তিগত কথা বাজারি করা হচ্ছে না।

­গতকাল
বেসোঁতে কদিনের কাজ।  সেইন্তে ভঁআতে অতনু থাকে। ওর ওখানেই ওঠার কথা, একদিন থেকে, পরের দিন বেসোঁ। অতনুকে বারবার বলে দিয়েছি, আমার পাহ্রী আসার কথা আর কাউকে না জানাতে, আর কারও সাথে দেখা করার ইচ্ছে ও সময় কোনটাই নেই। দ্য গলে অতনু আমাকে নিতে আসতে পারেনি, আমি সকাল সকাল নেমেছি আর ওকেও কর্মক্ষেত্রে বেরোতে হবে। ট্যাক্সি নিতে বলেছে। আমি ওর এপার্টমেন্টে পৌঁছালেই, ও বেরিয়ে যাবে। অ্যারাইভালে বেরিয়ে কিছু দূর এগোতেই হঠাৎ ডানদিকে চোখ গেল, দেখলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছ। পাঁচ মিনিট দু’জন দু’জনের তাকিয়ে থাকলাম। তুমি কি করে জানলে যে আমি আজ আসছি? আমি তো কাউকে জানাইনি, অতনুরও তোমার খবর রাখার কথা নয়। কোনও কথা বলিনি, অনেক কিছু মনে চলছিল, অন্যমনস্ক হয়েই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে চললাম।  

চার বছর আগে
এয়ার পোর্টের দিকে ট্যাক্সি চলেছে, রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। আমরা দু’জন ট্যাক্সির দুই জানলা দিয়ে একটা শহরের একই রাস্তার দুটো আলাদা ফুটপাথ দেখে চলেছি। কারও মুখে কোনও কথা নেই। দু’জনের মনেই এক রাগমিশ্রিত দুঃখ। রাগ, একে অপরের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব না বোঝার; দুঃখ, প্রেম নামের বন্ধুত্বের বন্ধু হওয়ার সময় আর নেই, আমরা অবহেলা করে চলেছি আজও ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তোমার পাহ্রী (তখন “প্যারিস” বলতাম) যাওয়াটাকে সেই সময় মেনে নিতে পারিনি। আমিও যাইনি, কেবল সেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে। কিন্তু তুমি যাবেই, যাও, তবু আজও একটা প্রতিশ্রুতি দিতে পারলে না, শেষ মুহূর্তেও।

ট্যাক্সি থেকে নেমে, তোমাকে শুধু বিদায় জানিয়েই ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। ঠিক করে কথা বলতে পারিনি। এয়ার পোর্টের ভিড়ে তোমার হারিয়ে যাওয়া অব্দি অপেক্ষা করিনি। ফিরে আসছিলাম, হয়ত এতটা দুঃখ তখনও আর কোনও কিছুতে পাইনি। একটা ম্যাসেজ এলো, তুমি জানালে যে তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো, প্রথমবার। সেই মুহূর্তেই ট্যাক্সি আবার ঘোরালাম এয়ার পোর্টের দিকে, ফিরে এলাম যেখানে তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম, তুমি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে। তার পরের ত্রিশ মিনিট আমি খুব নিবিড়ভাবে তোমার উষ্ণতা বুঝেছিলাম। তুমি চলে গেলে। তুমি আলাদা ছিলে, তুমি চলে যাওয়ার সময় শীতলতা দিয়ে যাওনি।

পাহ্রী পৌঁছে তুমি কেবল দুই মাস আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলে, তার পর তুমি আর তুমি ছিলে না। কোনও এক অনন্যার খোঁজ করে চলেছি আমি আজও। পাহ্রীর এক ফ্লোরিস্টকে দিয়ে প্রতিবছর জন্মদিনে তোমায় ফুল পাঠিয়েছি, পেয়েছিলে? শেষ বছর থেকে তোমার ঠিকানাটা বদলে গেছে বোধহয়!

আজ
আজকের এই রাতটার কথা অনেক আগেই লিখে রেখেছি। তোমার কথা লেখা নেই এতে, আজকেও তুমি নেই। এই “তুমি” তুমি নও। 


“তোমার সাথে আলাপ বছর তিন আগে;
আলাপ সেই প্রেমের শহরে, এক তারা ভরা রাতে
আজও আশ্চর্য হই, কেন সেদিন মেঘ সরে গেলো?
মধ্যরাতের প্যারিস, খুব শীত বেড়ে গেলো হঠাৎ করে
তুমি চশমা খুলে দিলে, নরম পশম নামিয়ে দিলে গলা থেকে;
শেষ পেগ অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে কখন বুঝতে পারিনি
আজ দুপুর থেকে তোমার চুলের ঘনত্বে হারিয়ে গেছি
জেনেভা থেকে সোজা উড়ে এসেছি, কাজের ওজুহাত সবাই দেয়
প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে চাই না, নীল চোখের নীলকণ্ঠ পাখি তুমি
মিথ্যে নয়, সদ্য হারানো প্রেম ভুলতে চেয়েছিলাম শরীরের দাবীতে;
রাত দুটো, দুজন হাঁটতে থাকলাম, তপ্ত আমার ওভারকোট
খালি রাস্তায় তুমি আমার দুই গাল চেপে ধরলে, শীতল হাত;
আমার ওষ্ঠ বন্দী বিশ সেকেন্ড; বললে ক্ষমা করতে
আজ আবার প্রথম চেনা মুখ তুমি, বিশ্বাস করো;
আর ক্ষমা করতে চাই না, তুমি জানো, আমি জানি;
এই তিন বছর কাদের থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছি? তুমি বল
ফিরিয়ে দাও আমাকে সেই রাত; কথা দিলাম, আর এই রাত ফিরবে না”